আজিজুর রহমান রাজু :

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নুরুল আমিনের টানাপোড়নে সংসার ছোট ভাইরাও যখন বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া করে তখন নুরুল আমিনের নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে শুরু করে জীবন সংগ্রাম। ১৩ বছর বয়সে দিনমজুরি কাজে যোগ দেন। কাঁধে নেন পরিবার চালানোর দায়িত্ব।

ভাইবোনের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও সংসার চালানোর ব্যয়- এ সবকিছুর দায়িত্ব ছিল নুরুল আমিনের ওপরেই। চট্টগ্রাম ২নং গেইট জান্নাত হোটেল নামের ভাতের হোটেলে চাকরি নেন নুরুল আমিন। এমরই মধ্যে সে কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইসলামাবাদ পূর্ব গজালিয়া ডালার মুখ তার বাড়িতে আসলেও পরদিনই (২২ আগস্ট) সে আবারও তার কর্মস্থল চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম পৌঁছালে গাড়ি থেকে নামলে এমন সময় সে ছাত্র আন্দোলনের মিছিল দেখেন এই ছাত্র সংগ্রামের কথা সবার মুখে শুনে আর টেলিভিশনের সংবাদ ও ফেসবুকে দেখে নুরুল আমিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারেন।

বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তরুণ ছাত্ররা রাজপথে প্রাণ দিচ্ছে। এময় শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায় নুরুল আমিনের । তখন নিজের কর্মস্থল না গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার মিছিলে যোগ দেন সে । কিন্তু এই মিছিলে পুলিশের এলোপাতাড়ি গোলাগুলি,গ্রেনেট,ইটপাটকেল নিক্ষেপে মাটিতে লুটে পড়ে সে। পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এসময় তার কিডনি ও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মারাত্মক জখম হয়।

হাসপাতালে ভর্তির ৮ দিন পর ( ৩০ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন নুরুল আমিন। এতে শোকের ছায়া নেমে আসে তার দরিদ্র পরিবারে। তবে তার মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ করতে পারেনি অসহায় পরিবার। আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে তার মৃত্যুর আসল রহস্য প্রকাশ করতে সাহস গোপন করতে বাধ্য হয়েছিল।

অবশ্য এখন শোককে শক্তিতে পরিণত করে নুরুল আমিনের স্বপ্ন পূরণে নতুন করে প্রতিজ্ঞা নিয়েছে শোকবিহ্বল পরিবারটি। নুরুল আমিন (১৮) কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলায় ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব গজালিয়া ডালার মুখ ছৈয়দ নূর ও মৃত আমেনা খাতুনের ছেলে। চট্টগ্রাম শহরের ২নং গেইট জান্নাত ভাতের হোটেলে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন ।

তাঁদের পরিবারের বৃদ্ধা অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালানোর ব্যয় নির্বাহ হতো আমিনের রোজগার দিয়েই। নুরুল আমিনের ভাই মুসলিম উদ্দিন জানান, নুরুল আমিন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন কিন্তু তার পড়াশোনা খরচ বহন করতে পারি না বলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে সে

চট্টগ্রাম একটি ভাতের হোটেল মাসিক চাকরি করে তবে তার এই বেতনে অসুস্থ বাবা ও পরিবারের খবর চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদায় ধারদেনা করে বিদেশ যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। গেল কিছুদিন আগে সে কক্সবাজার এসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে (২২ আগস্ট) আবারও তার কর্মস্থলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। পরে চট্টগ্রাম পৌঁছালে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার মিছিলে যোগ দেন এসময় চারদিক থেকে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে সেই সাথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এতে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে এলোপাথাড়ি মারধর করলে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় কিডনিতে আঘাত লাগে এবং শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মারাত্মক জখম হয়। পরে চিকিৎসারত অবস্থায় (৩০ আগস্ট) মঙ্গলবার ভোর ৪ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে।

এই বিষয়ে ঈদগাঁও উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি শিক্ষার্থী হাবিব আজাদের সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদক জানান,আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেন গজালিয়া নুরুল আমিন কিন্তু পরিবারটি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির ভয়ে তারা মৃত্যুর আসল ঘটনা গোপন রেখেছিলেন। আমরা ইতোমধ্যে চারজনের একটি তদন্তের টিম করেছি। পরিবারটিকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান এই ছাত্র প্রতিনিধি।

আমিনের অসুস্থ বৃদ্ধা পিতা ছৈয়দ নূর, অঝোরে অশ্রু ফেলে ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও তাঁকে শহিদের মর্যাদা দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। গজালিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু হেনা, শিক্ষার্থী রেজাউল করিম, লিয়াকত হোসেন, জুবাইদুল ইসলামসহ অনেকে বলেন পরিবারটি অতিশয় দরিদ্র। সে ‘শহিদ’ হওয়ায় পুরো পরিবার এখন অকুল পাথারে পড়েছে।’ তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকার এবং সমাজে বিত্তবানদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি ।